নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড লিমিটেড নামে একটি জুস তৈরির কারখানায় ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুই নারীসহ তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক শ্রমিক। কারখানার ভেতরে আটকা পড়েছেন অনেকে। আট ঘণ্টারও বেশি সময়ের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। সংস্থাটির ১৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত ওই কারখানায় আগুনের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডে নিহতরা হলেন, সিলেটের যতি সরকারের স্ত্রী স্বপ্না রানী (৪৫) ও কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার উত্তরকান্দা এলাকার হারুন মিয়ার স্ত্রী মিনা আক্তার (৪১)। রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোরসালিন নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। তার বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।
শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড লিমিটেড কারখানায় প্রায় সাত হাজার শ্রমিক কর্মচারী কাজ করেন। ছয়তলা ভবনে থাকা কারখানাটির নিচ তলার একটি ফ্লোরে কার্টুন এবং পলিথিন তৈরির কাজ চলে। সেখান থেকেই হঠাৎ করে আগুনের সূত্রপাত হয়। আস্তে আস্তে আগুনের লেলিহান শিখা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। কালো ধোঁয়ায় কারখানাটি অন্ধকার হয়ে যায়। শ্রমিকরা ছোটাছুটি করতে শুরু করেন। কেউ কেউ ভবনের ছাদে অবস্থান নেয়। আবার কেউ কেউ ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে থাকে। আগুন থেকে বাচঁতে রানী ও মিনা আক্তার নামের দুই নারী ছাদ থেকে লাফিয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এছাড়া গুরুতর আহত বাকিদের অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন পরিবহনে করে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়।
রাত দেড়টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। আগুনের লেলিহান শিখা চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। আগুনের লেলিহান শিখা পাঁচ তলা পর্যন্ত উঠে গেছে। যে ভবনটিতে আগুন লেগেছে সে ভবনটিতে শতাধিক শ্রমিক আটকে আছে বলে দাবি করেন শ্রমিকরা।
অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহ নুসরাত জাহান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতিকুল ঘটনাস্থলে আসেন।
অগ্নিকাণ্ডের পাঁচ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও শ্রমিকদের উদ্ধার করতে না পারায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার সামনে ভাঙচুর করেন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ মিছিল করেন। শ্রমিকরা অভিযোগ করে, হাসেম ফুড লিমিটেড কারখানাটির যে ভবনটিতে আগুন লেগেছে সে ভবনটি বিল্ডিং কোড না মেনে করা হয়েছে। অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কারখানাটি পরিচালনা করায় এই অগ্নিকাণ্ড।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহ নুসরাত জাহান বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন। এখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। কারখানা কর্তৃপক্ষ যদি বিল্ডিং কোড না মেনে ও অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভবন তৈরি করে থাকে, এমন প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আব্দুল আল আরিফিন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে যাচ্ছে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি।