জাককানইবি প্রতিনিধিঃ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অপর একজন শিক্ষকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাময়িক উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আবার একাধিক সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে হাস্যরসেরও সৃষ্টি হয়েছে কেননা অভিযোগকারী নিজেই বিভিন্ন অনিয়মের কারণে পূর্বে শাস্তি পেয়েছেন।
গত ২৪ জুন ২০২১ সৈয়দ মামুন রেজা নামের নাট্যকলা ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের একজন শিক্ষক তার নিজ বিভাগের শিক্ষক মুশফিকুর রহমান এর নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগ আনেন।
বিষয়টি একটি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যাসহ ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর। পরবর্তীতে যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে আনিত অভিযোগের সত্যতা নেই মর্মে রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত একটি পত্র প্রেরণ করে প্রশাসন। পত্রে ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো সহকর্মীর বিরুদ্ধে এমন অসত্য অভিযোগ থেকে বিরত থাকার জন্যেও অনুরোধ করা হয়। এ বিষয়ে সৈয়দ মামুন রেজার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।
নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের এই শিক্ষক (মামুন রেজা)'র বিরুদ্ধে ইতোপূর্বেও সহকর্মীদেরকে নানাভাবে হেনস্তা করা সহ নানা অভিযোগের গুঞ্জন রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন তিনি (সৈয়দ মামুন) কম সিজিপিএ নিয়ে বিভাগের শিক্ষক হয়েছেন, উনিই আবার বিভিন্ন সময়ে কিভাবে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেন। অপর একজন শিক্ষক বলেন, মামুন স্যার নিজে ছিলেন তার স্ত্রীর নিয়োগ বোর্ডে। কেবল তার স্ত্রীর পরীক্ষার সময় বাইরে বের হয়েছিলেন। কিন্তু সিদ্ধান্তের সময় তিনিই ছিলেন। যা বিধি সম্মত নয়। এর আগে বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে স্ত্রীকে নিয়োগ প্রদান, স্ত্রীকে নিয়োগ দিতে যোগ্যতা কমানোরও অভিযোগ পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষা জালিয়াতির দায়ে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে দু'বছরের জন্যে শাস্তি প্রাপ্ত হয়েছেন এই শিক্ষক। শাস্তি অনুযায়ী এই সময়ের মধ্যে শুধুমাত্র ক্লাস নিতে পারবেন এবং প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে পারবেন উল্লেখ থাকলেও ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে অন্যান্য কার্যক্রমে অংশগ্রহণের অভিযোগ করেছেন বিভাগের একাধিক শিক্ষক।
অপর একজন শিক্ষক বলেন, অস্থায়ী নিয়োগে যোগদান করে স্থায়ীকরণ পরীক্ষায় ফেল করেন সৈয়দ মামুন, পরবর্তীতে প্রভাব খাটিয়ে উত্তীর্ণের ফল প্রকাশ করানো হয়। তার নিয়োগ বোর্ডে নিজ বিভাগের দুইজন শিক্ষক এক্সপার্ট ছিলেন এবং একাধিক ফোর ফার্স্ট ক্লাস আবেদনকারী থাকা সত্ত্বেও থ্রি ফার্স্ট ক্লাস নিয়ে তিনি নিয়োগ পেয়েছেন বলে জানা যায়। রেয়াতের মাধ্যমে শাস্তি কমিয়ে পদোন্নতি নেয়ার মতো অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া তার রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও নানাবিধ সংশয় রয়েছে।
ছাত্র জীবনে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)র সদস্য থাকা, ছাত্রদলের অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণ ইত্যাদির অভিযোগ থাকলেও তিনি আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু নীল দলের সহ সভাপতি বলে জানা যায়৷ একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের সাবেক সদস্য হিসেবে নিজের স্ত্রীর পদকে কাজে লাগিয়ে, বর্তমান সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ কে সামনে রেখে রাজনৈতিকভাবে প্রশাসনকে নানাভাবে চাপে ফেলা এবং নিজের প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন ছাড়াই অপর এক শিক্ষকের এনজিও কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ দিয়েছেন বিভাগের পছন্দের শিক্ষার্থীদের। প্রশ্ন উঠেছে খাতা মূল্যায়নে নিরপেক্ষতা নিয়েও। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক মো. বাকীবিল্লাহ (সাকার মুস্তাফা) বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন ছাড়াই ২৪ এপ্রিল ২০২০ থেকে এসেফ (ACEEPH) ইনস্টিটিউট নামে একটি বেসরকারি সংস্থা পরিচালনা করে আসছেন। যা বিশ্ববিদ্যালয় চাকরিবিধির পরিপন্থি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই একটি ভাড়া বাসায় পরিচালিত হচ্ছে এনজিওটি। সহকর্মীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, শিক্ষার্থীদের মানসিক নিপীড়ন ও নানা অপকৌশলে বিভাগের ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক নষ্ট করে বিভাগকে অস্থিতিশীল করা, ব্যাক্তিগত উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করার অভিযোগও পাওয়া গেছে এই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষকদের থেকে এমন আচরণ প্রত্যাশা করেন না বলেও অনেকে মত দিয়েছেন। অনেকে এই শিক্ষকের অভিযোগকে ভুতের মুখে রামনাম বলেও অবহিত করেছেন।