নারায়ণগঞ্জের ঘটনার পর আবারও প্রমাণিত হলো যে, দেশের কারখানাগুলো এখনো পুরোপুরি নিরাপদ নয়। তৈরি পোশাকশিল্পে ক্রেতাদের চাপে কমপ্লায়েন্স ইস্যু নিশ্চিত করা হলেও অন্য কারখানাগুলোর তদারকির বড়ই অভাব। যদিও সরকারের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন দপ্তর রয়েছে। কিন্তু কোনো ঘটনা ঘটলে তখুনি কেবল জানা যায়, ঐ কারখানার কমপ্লায়েন্স ছিল না। বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন—তা হলে পরিদর্শন দপ্তরের কাজ কী?
রূপগঞ্জের ঘটনার পর আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাও তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে দ্রুত দেশের সব কারখানায় জরুরি তদারকির পরামর্শ দিয়েছে। দেশীয় সূত্রগুলোও বলেছে, ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটার আগেই তদারকি নিশ্চিত করতে পারলে অনেক জীবন বেঁচে যেতে পারে। বিদেশেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে না। নইলে বাংলাদেশি পণ্য বিদেশি ক্রেতারা নেবে না।
নিরাপদ কর্মক্ষেত্র এখন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বিশ্ব জুড়ে ক্রেতারা এখন শ্রমিকদের নিরাপত্তার ইস্যুটিকে জোর দিচ্ছে। এমনকি শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও কোথাও কোথাও তা বহাল রয়েছে বলেও সূত্র জানায়। এ অবস্থায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের আগে নিয়মিত তদারকি করা দরকার। অবহেলা করলে সংশ্লিষ্টদেরও শাস্তির ব্যবস্থা থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ব জুড়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় আগুনে ৫২ জনের মৃত্যুর ঘটনাটি আলোচিত। যে কারণে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও এখানকার কর্মপরিবেশের ওপর নজর রাখছে। পোশাকশিল্পের বাইরে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটনায় অন্যান্য শিল্পকারখানার দিকেও নজর দেওয়ার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন কেউ কেউ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে রূপগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে শ্রমিকের কর্মপরিবেশ নিরাপদ করতে দেশের সব কারখানায় জরুরি তদারক করার প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছে। বলেছে, দেশের হাজার হাজার শ্রমিক দিনের বেশির ভাগ সময় কারখানায় কাটান। এই কারখানাগুলো বিল্ডিং কোড মেনে নির্মিত হয়েছে কি না এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়মকানুন মানা হচ্ছে কি না, তা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও কারখানা মালিকদের খতিয়ে দেখা দরকার। আইনকানুন মেনে ভবন নির্মাণ ও কারখানা পরিচালনা করলে অগ্নিদুর্ঘটনার মতো জরুরি মুহূর্তে শ্রমিকরা নিরাপদে বের হওয়ার সুযোগ পান।
রানা প্লাজা ধসের পর তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার, মালিকপক্ষ, শ্রমিক সংগঠন ও উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে আইএলও। রূপগঞ্জের ঘটনার পর পোশাকশিল্পের বাইরের অন্যান্য কারখানায় উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়া হলে আইএলও সহযোগিতা করবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। আইএলও মনে করে, হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় আগুনে ৫২ জনের মৃত্যুর ঘটনার পর সারা দেশের শিল্পকারখানার নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে যেসব ঘাটতি রয়েছে, তা পূরণে সব পক্ষের জোর চেষ্টা থাকবে।
বৃহস্পতিবার বিকালে হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। শুক্রবার দুপুরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ঐ ভবনের চারতলা থেকে ২৬ নারীসহ ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। সব মিলিয়ে এ ঘটনায় গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৫২ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
এর আগে ২০১২ সালের তাজরীন কারখানায় দুর্ঘটনায় মারা যান ১১১ জন শ্রমিক যার বেশির ভাগ নারী। সে সময় জরুরি বহির্গমন পথ বন্ধ থাকায় এত বেশি নিহত হবার ঘটনা ঘটে। এর পরের বছর ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ৯তলা বহুতল বাণিজ্যিক ভবন রানা প্লাজা ধসে মারা যান ১ হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক। আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেন অনেকে। সেই বড় দুটি ঘটনার পর সারা বিশ্বেই বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিরাপত্তার ইস্যুটি সামনে চলে আসে।