কঠোর লকডাউন শিথিল হয়েছে বুধবার (১৪ জুলাই) মধ্যরাত থেকে। নতুন নিয়মে বাস-ট্রেন-লঞ্চ চলাচল করবে আট দিন। ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানী ও তার আশপাশ থেকে ঘরমুখো হচ্ছেন যাত্রীরা। কিন্তু শুরুতেই তারা বাস-ট্রেন-লঞ্চের টিকিট পেতে ভোগান্তির মধ্যে আছেন। কোথাও মিলছে না টিকিট।
কাউন্টার খোলার সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চের কেবিনের টিকিট শেষ হয়ে গেছে বলে বলছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। ট্রেনের টিকিট পাওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও অনেকে অ্যাপসে ও ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারছেন না। রাজধানীর গাবতলীসহ বিভিন্ন বাস কাউন্টারে কাঙ্ক্ষিত দিনের বাস যাত্রার টিকেট পাচ্ছেন না যাত্রীরা।
এ অবস্থায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঈদুল আজহায় বাড়ি যাবার জন্য বিরাট চাপ তৈরি হয়েছে বিভিন্ন বাস টার্মিনাল, সদরঘাট ও রেল স্টেশনে। যাত্রীর তুলনায় টিকিট কম থাকে স্বাভাবিক সময়েই। এখন একসঙ্গে অনেক যাত্রী বাড়ি যেতে চাচ্ছেন, তাই সংকট তীব্র হয়েছে। এই সংকট পুঁজি করে সংশ্লিষ্টরা ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি বাড়ানো উচিত।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। লঞ্চের কাউন্টারগুলোতে বুধবার থেকেই শুরু হয় আগাম কেবিন বুকিং। তবে প্রভাবশালীরা ছাড়া আগাম কেবিন এখন বুকিং দেওয়া হচ্ছে না বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। যাত্রীরা কেবিন চাইতে গেলেই কাউন্টারের দায়িত্বরতরা কেবিন নেই বলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। রাজধানী ছাড়াও বিভিন্ন নদীবন্দরে এই অবস্থায় যাত্রীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন।
এমভি কীর্তনখোলা লঞ্চ কোম্পানির সহকারী মহাব্যবস্থাপক বিল্লাল হোসেন দাবি করেছেন, ‘তাদের কোম্পানি আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে কেবিন দেয়। এবার কেবিন বুকিং শেষ হয়ে গেছে। ডেকে যাত্রীপ্রতি ভাড়া পড়বে ৪০০-৪৫০ টাকা। কেবিন ও সোফার ভাড়া বাড়েনি।’
বুধবার বরিশাল যাওয়ার জন্য কেবিন বুকিং দেওয়ার চেষ্টা করেও পারেননি যাত্রী সারোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জনকে ফোন করে বুকিং দেওয়ার জন্য বলছি। চেষ্টা করছি দেখি টিকিট পাই কি-না।
এ দিকে রাজধানীর গাবতলী, কলেজ গেট, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও তার আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন বাস কাউন্টারে টিকিট নেই, টিকিট নেই রব উঠেছে।
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরপাল্লার বাস পরিচালনা করতে হবে। একটি বাসের মোট আসনের ৫০ শতাংশ যাত্রী বহন করতে হবে। এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরপাল্লার বাস চালাতে হবে বলে স্বাভাবিক সময়ে যে সংকট থাকে এবার এই সংকট আরও বেশি হবে। তবে কাউন্টার ও অনলাইনে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে।’
গাবতলী বাস টার্মিনালে কাউন্টারে গিয়ে হানিফ পরিবহনে রাজশাহী যাওয়ার জন্য কোন টিকেট পাননি সাইদুর রহমান।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বুধবার গাবতলী কাউন্টারে গিয়ে একাধিক পরিবহন কোম্পানির কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে দেখি ২০ জুলাই রাজশাহী যাওয়ার কোনো টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। আজ আবার চেষ্টা করব, দেখি পাওয়া যায় কি-না।’
কমলাপুর রেলস্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট কউন্টারে বিক্রি হচ্ছে না। টিকিট বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে।
কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মাসুদ সারোয়ার বলেন, ‘যাত্রীদের চাহিদার তুলনায় টিকিট কম। এছাড়া একক সময়ে সার্ভারে বেশি চাপ পড়ছে। ফলে কোনো কোনো সময় বিপর্যয় তৈরি হচ্ছে। তবে এই অবস্থা কেটে যাবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি ট্রেনে মোট আসনের বিপরীতে ৫০ ভাগ টিকিট বিক্রি করা হবে। এর বেশি টিকিট বিক্রি করা হবে না। ঈদ মৌসুমে যাত্রীর চাপ বেশি থাকে। মোট আসনের বিপরীতে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করার নির্দেশনা মানতে হবে। ফলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম যাত্রী পরিবহন করতে হবে। স্ট্যান্ডিং টিকেট বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে। দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী পরিবহন করা হবে না।’