নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০১৮ সালের জুলাই ও আগস্টে ৯ দিন আন্দোলন করেছিল খুদে শিক্ষার্থীরা। সেই বছর সড়ক নিরাপদ করতে সরকারি উদ্যোগের ঝড় দেখা গিয়েছিল। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, সংস্থাগুলো কমিটি গঠন, বারবার বৈঠক ও নির্দেশনা জারিতে মত্ত হয়। সরকার সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুমোদন দেয়। ওই সময় জোরদার হয় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর অভিযান। ওই আন্দোলনের তিন বছর পূর্তি আজ। কিন্তু করোনার জেরে সড়কে শৃঙ্খলা আনার সব কার্যক্রম যেন বন্ধ হয়ে আছে।
২০১৮ সালের এই দিনে (২৯ জুলাই) রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের চাপায় নিহত হন শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব এবং একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম। এর জেরে শুরু হয়েছিল নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন।
ওই আন্দোলনের পর সড়ক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার জন্য ১১১টি সুপারিশ করেছিল বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইন্সটিটিউট। কিন্তু করোনার কারণে সেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন কার্যক্রম থমকে আছে। জানতে চাইলে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারের কাছে আমরা ১১১টি সুপারিশ তৈরি করে জমা দিয়েছিলাম। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি পুস্তক তৈরির বিষয়ে অগ্রগতি আছে। সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়নের পর তা বাস্তবায়নের চেষ্টা দেখা গেছে। বিভিন্ন বিধি তৈরির কাজ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ১১১টি সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের সভা করোনাকালে অনলাইনে সুযোগ মতো হচ্ছে। আমি একটি তথ্য ও সম্প্রচার সংক্রান্ত কমিটির সদস্য হিসেবে আছি। এই কমিটি নিরাপদ সড়কের জন্য প্রচার প্রচারণার বিভিন্ন বিষয়বস্তু চূড়ান্ত করেছে।
তিনি জানান, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ১১১ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের কাজ করছে টাস্কফোর্স। টাস্কফোর্সের অধীনে চারটি কমিটি রয়েছে। টাস্কফোর্সে আছেন ৩৩ জন সদস্য। টাস্কফোর্সের প্রধান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। গত ২৪ নভেম্বর টাস্কফোর্সের প্রথম সভা হয়েছিল। ২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রধান করে উচ্চ ক্ষমতার টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১১১ সুপারিশ ঝুলে আছে। বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অবশ্য গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত টাস্কফোর্সের সভার পর অধিকাংশ সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ হিসেবে করোনাকালকে চিহ্নিত করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, মোটরসাইকেলে হেলমেটবিহীন চালক ও সহযাত্রী কমেছে। সড়কে যানবাহন আগের চেয়ে আইন মেনে চলছে। সড়কে ফিটনেস ও কাগজবিহীন গাড়িও কমেছে।
রাজধানীতে পাম্প থেকে তেল না পাওয়ার ভয়ে মোটরসাইকেল চালক ও সহযাত্রীদের হেলমেট পরার হার বেড়েছে। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে গণপরিবহন চলাকালে রেষারেষি করে পাল্লা দিয়ে বাস চালানো এখনও বন্ধ হয়নি। করোনাকালে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকলে ট্রাকসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহন, রিকশা ও মোটরসাইকেলের মতো যানবাহন চলাচলে গতিসীমা মানা হচ্ছে না।
বিমানবন্দর সড়কে গাড়ি চলাচলের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটারের বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বুধবার সকালে বিমানবন্দর সড়কে বেশিরভাগ মোটরযানের গতিবেগ ছিল ৬০ কিলোমিটারের বেশি। গতিসীমা না মেনে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন সাজেদুল ইসলাম নামের একজন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেশি ট্রিপ দেওয়ার জন্য বেশি গতিতে চালাই।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর অংশ হিসেবে বাস থামানোর জন্য রাজধানীতে ১২১টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু সেসব স্থানে বাস থামানোর নিয়ম মানা হচ্ছে না। বাস চালানোর সময় গাড়ির ভেতরে প্রদর্শন করা হচ্ছে না চালকের লাইসেন্সের কপি। অথচ এসব বিষয় মেনে চলতে ২০১৮ সালের আগস্টে কঠোর সরকারি নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে।
সড়কে শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। এই আইনে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি রাখা হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন অপরাধের জরিমানা। অপরাধ জামিন অযোগ্য করা হয়েছে। এখন আইনটির বিভিন্ন ধারা সংশোধন করার চেষ্টা চলছে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট ১৭টি বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। তখন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিল।